

স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকার ধামরাইয়ে একটি বিনোদন কেন্দ্রে শিক্ষা সফরে আসা শিক্ষার্থীদের মোবাইল, মানিব্যাগ লকার থেকে হারানোকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী ও পার্ক কর্মচারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিনোদন কেন্দ্রের স্থাপনায় ভাংচুর করে। অপর দিকে পার্ক কর্মচারীরা শিক্ষার্থীদের বহনকারী বাস ভাংচুর করে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ৬০ জন আহত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আহতদের নাম ও বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।
বুধবার বিকেল ৫টার দিকে ধামরাই উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নের সিতি এলাকায় আলাদীন্’স পার্কে বনফুল আদিবাসী ফাউন্ডেশন ট্রাষ্ট কর্তৃক পরিচালিত ‘বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজ’র শিক্ষার্থীদের সাথে এই ঘটনা ঘটে। এর আগে, সকাল ১০টার দিকে মিরপুরের ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিনোদন কেন্দ্রটিতে শিক্ষা সফরে আসেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘটনার সময় উপস্থিত অনেকের সাথে কথা বলে জানাযায়, বুধবার সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৬৫০ জন ১২টি বাসে করে বিনোদন কেন্দ্রটিতে আসেন। দুপুরের দিকে শিক্ষার্থীরা নিজেদের মোবাইল, মানিব্যাগসহ মালামাল পার্কের লকারে রেখে ওয়াটার পার্কে নামেন। তবে পানি থেকে উঠে কয়েকজন শিক্ষার্থী লকার খোলা ও সেখানে রাখা মোবাইল, মানিব্যাগ খুঁজে পাননি। শিক্ষার্থীরা এজন্য পার্ক কর্মচারীদের দায়ী করলে উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। বিষয়টি কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদের মধ্যস্ততায় মীমাংসা হয়, তবে মুঠোফোন খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিকেল ৫টার দিকে বিনোদন কেন্দ্র ছেড়ে যাওয়ার সময় শিক্ষার্থীরা মুঠোফোন না পাওয়া পর্যন্ত বিনোদন কেন্দ্র ছেড়ে যেতে আপত্তি জানান। একপর্যায়ে তারা বিনোদন কেন্দ্রের ভিতরে বিশৃঙ্খলা ও ভাংচুর করে। তখন বিনোদন কেন্দ্রের কর্মচারীরা তাদের ওপর চড়াও হয়। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পার্ক কর্মচারীরা শিক্ষার্থীদের পরিবহনের অন্তত ৮টি বাসে ভাংচুর করে। সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৬০জন রক্তাক্ত জখমসহ আহত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের উদ্ধার করে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজের শিক্ষক নাসির আফজাল বলেন, সকাল ১০টার দিকে আমরা ৬৫০ জন এসেছিলাম ১২টি বাসে করে। বিকেল ৫টার দিকে ঘটনাটা ঘটে। কয়েকটি মোবাইল খোয়া যায়। এনিয়ে কথা কাটাকাটি। তখন বাচ্চারা বলেছে, মোবাইল ছাড়া বাসায় গেলে সমস্যা, যাতে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। তখন আমরা বললাম, তারা যদি না দেয় আমরা দেখবো। এরইমধ্যে তারা (শিক্ষার্থীরা) ভাংচুর করেছে। এটি দেখে হয়তো আশপাশের লোকজন ডেকেছে। তারাও ভাংচুর করেছে। এতে আহত ৬ জনকে এনাম মেডিকেলে নেওয়া হয়েছে। অনেকে সাধারণ চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। আমরা মামলা করবো বলেন তিনি।
আরেক শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রায় ৬০জনের মতো শিক্ষার্থীকে সন্ত্রাসীরনা মেরে আহত করেছে। অনেকের মাথা ফেটে গেছে। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে বিনোদন কেন্দ্র আলাদীনস পার্কের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা নকিবুল হাসান রনি বলেন, স্কুল থেকে সকালে পিকনিকে এসেছিল। ঘটনাটি দুপুরে মীমাংসা হওয়ার পরে বিকেলে যাওয়ার সময় সব কিছু ভাংচুর করে গেছে। মোবাইল হারানোর মতো কিছুই হয়নি। সেখানে ১০০টি লকার আছে। এটা নিয়ে আমাদের স্ট্রাফকে প্রথমে মারধর করছে, পরে ওনাদের শিক্ষকদের ডেকে এনে বিষয়টা মীমাংসা করেছি। শিক্ষকরা বলছে, যে ছেলেকে মারছে তাকে শান্তনা দিয়ে চলে গেছে। পরে বিকালে বের হওয়ার সময় ছাত্ররা ভাংচুর করছে ও স্টাফদের মারধর করছে। তখন এলাকার মানুষজনও ছিলো, তারাও আসছে, পরে ধাওয়া পাল্টা দেওয়া হয়েছে, এটাই অন্য কিছুই না। আমাদের ১৫/১৬ জন আহত হয়েছে, এর মধ্যে সবাই রক্তাক্ত জখম। আহত সবাই সরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন পার্ক কর্তৃপক্ষ।
ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, বেড়াতে আসা শিক্ষার্থীরা বিনোদন কেন্দ্রটির লকারে তাদের মোবাইলসহ অন্যান্য জিনিসপত্র রেখে গোসলে নামেন। পরে কয়েকজন শিক্ষার্থী লকার থেকে মোবাইল হারানোর অভিযোগ তুলেন। এ নিয়ে বিনোদন কেন্দ্রর কর্তৃপক্ষের সাথে শিক্ষার্থীদের বাগবিতন্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে শিক্ষার্থী ও বিনোদন কেন্দ্রের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। তবে এখনও কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।