স্টাফ রিপোর্টার : চিকিৎসাসেবার নামে হয়রানিসহ নানা রকম অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে সাভারের একমাত্র সরকারি হাসপাতাল ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’ এর বিরুদ্ধে। সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল এলাকার কয়েক লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান এই হাসপাতালটি। দিনের পর দিন সরকারি চিকিৎসকদের স্বেচ্ছাচারিতা ও চিকিৎসাসেবার নামে কথিত দালালদের প্রতারণা বেড়েই চলেছে এখানে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে এই এলাকার নিরীহ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা।
সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কিছু অসাধু কর্মচারীর যোগসাজশে দালালরা হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে কমিশনে ভর্তি করাচ্ছে এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে।
এছাড়াও হাসপাতালে রোগীদের খাবারের মান নিয়েও রয়েছে ব্যাপক অভিযোগ। সপ্তাহের কোন দিন কোন খাবারটি রোগীদের দেয়া হবে এবং কতটুকু পরিমাণে দেয়া হবে এমন রুটিন থাকলেও তা মানছেন না খাবার সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া নোংরা ও বাসি খাবার খাওয়ানো হয় এমন অভিযোগও রয়েছে।
সরকারিভাবে সবধরনের প্যাথলজি, আল্ট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজিসহ অত্যাধুনিক ব্যবস্থা থাকলেও অতিরিক্ত সম্মানির লোভে দালালদের যোগসাজসে রোগীদের বিভিন্ন বাহানায় পাঠিয়ে দেয়া হয় তাদের নির্ধারিত বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।
সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে ভর্তি হওয়া কয়েকজন রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, সঠিক সময়ে নার্স ও চিকিৎসদের উপস্থিতি পাওয়া যায় না। অপরদিকে ঔষধও নিয়মিত পাওয়া যায় না এই সরকারি হাসপাতালে। দুই একটা ঔষধ ছাড়া বাকি সব ঔষধই কিনে আনতে হয় বাহিরের দোকানগুলো থেকে।
সোমবার সকালে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কানের সমস্যা নিয়ে ডাক্তার দেখাতে আসেন বাড্ডা ভাটপাড়া এলাকার ফরিদা আক্তার (৫০)। তিনি এই সরকারি হাসপাতাল থেকে কোন চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ফিরে যান।
ফরিদা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, কানের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে তিন টাকা টিকেট ১০ টাকা দিয়ে নিতে হয়েছে। পরে চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি আমার কোন সমস্যার কথা না শুনেই একটি স্লিপ ধরিয়ে দেন। ‘এফ এম হিয়ারিং কেয়ার সেন্টার’ চাঁন টাওয়ার থানা ইস্টার্ন লেখা স্লিপটির উল্টো পাশে ১০০০ টাকা ভিজিট লেখে সেখানে চলে যেতে বলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় এফ এম হিয়ারিং কেয়ার সেন্টারটি সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার (প্যাথলজিস্ট) আবিদা আক্তারের ভাইয়ের।
এ বিষয়ে আবিদা আক্তার বলেন, এফ এম হিয়ারিং কেয়ার সেন্টারটি আমার ভাইয়ের না তবে আমার ভাই সেখানে চাকুরি করে। ঐ রোগীর কান পরীক্ষার জন্য ঐখানে পাঠানো হয়েছিল। কমিশন পাওয়ার আশায় পাঠাইনি। তাছাড়া ছয় বছর ধরে এই হাসপাতালে কাজ করতেছি। আমরা এখানে যেভাবে রোগীদের সার্ভিস দেই অন্য কোথাও এমন সার্ভিস পায় না। আমি এমনিতেই খুব ভালো পজিশনে আছি তাই আমার আলাদা কোন স্বার্থ নেই। একটা ভালো জায়গা থেকে পরীক্ষা না করাইলে আমরা তো রোগটা ধরতে পারি না। কম রেট যাতে রাখে তাই টাকার অংক লিখে ওইখানে পাঠাইয়া দেই।
গত কয়েকদিন সকালে সরেজমিনে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকলেও হাসপাতালের ভেতরে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এসব আবর্জনা থেকে সৃষ্ট উৎকট গন্ধ ও রোগ-জীবাণুতে রোগীর স্বজনরাও অসুস্থ বোধ করেন।
পরীক্ষাগারে দেখা গেছে কোন রোগী রক্ত পরীক্ষার জন্য গেলে তাদের সাথে খারাপ আচরণ করতে দেখা গেছে।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে হাসপাতালের সেনেটারী ইন্সপেক্টর মোজাম্মেল হোসেন অনুমোদনহীন বিভিন্ন ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ঘুরে সমস্যা তুলে ধরে অভিযানের ভয় দেখিয়ে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সেনেটারী ইন্সপেক্টর মোজাম্মেল হোসেন বলেন, আমি কোন হাসপাতাল কিংবা কোন রেস্টুরেন্ট থেকে অভিযানের ভয় দেখিয়ে আর্থিক কোন সুবিধা নেইনি।
এদিকে সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মী হয়েও আফরোজা বাড়তি টাকার লোভে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্যসেবা কার্ড বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিলি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মোঃ: তৌহিদ-আল-হাসান বলেন, এই হাসপাতালে ১৫ জন চিকিৎসক রয়েছে এবং সবাই উপস্থিত। চিকিৎসকের কোন সংকট নেই। মেডিকেল অফিসার আবিদা আক্তার স্লিপ ধরিয়ে রোগীকে অন্য স্থানে পাঠানোর যে কাজ করেছে তা মোটেও ঠিক করেনি। এছাড়া সেনেটারি ইন্সপেক্টর মোজাম্মেলসহ অন্যান্য অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিষয়ে তিনি বলেন, সবাইকে সতর্ক করে দেওয়া হবে
Leave a Reply